ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে কয়েকটা ফ্রেন্ড একসাথে আড্ডা দেয়ার ফাঁকেই নেমে এলো সন্ধ্যা। ক্যাম্পাস থেকে বাসা টা খুব কাছে বলেই হয়তো চিন্তা নেই কেয়ার। আড্ডা শেষে কয়েকটা ফ্রেন্ড মিলে ফুচকার দোকানের দিকে অগ্রসর হলো ফুচকা খাবে ভেবে। প্রায় সবসময়ই এখানেই ফুচকা খাওয়া হয় কেয়া ও তার বন্ধুবৃত্তের। প্রতিবারের মতো আজও আসলো ফুচকা খাবে, ফুচকার ওর্ডারও করলো।
হঠাত করেই চোখ পড়লো পাশেই ফুচকার প্লেট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার দিকে। চোখ পড়তেই কেমন থমকে গেলো কেয়া, নিশ্চুপ হয়ে গেলো তার পৃথিবী। কিছুক্ষণ থ হয়েই দাঁড়িয়ে ছিলো কেয়া। ছেলেটাও কিছু বলছেনা, দাঁড়িয়ে আছে অবাক হয়েই। দুজনের চোখই ছলছল করছিলো জলের হাওয়ায়। অতঃপর ফুচকা না খেয়েই বাসায় ফিরে যায় কেয়া।
ছেলেটার নাম সায়েম, কেয়ার চাচাতো ভাই। কেয়ার থেকে দুবছরের বড় হলেও কেয়ার ছোট বেলার খেলার সাথী ছিলো সায়েম। সায়েমের পুতুল খেলা, বউ জামাই খেলা কিংবা হাড়িপাতিল খেলার সঙ্গী ছিলো কেয়াই।
একবার পাশের বাড়িতে যৌতুক দিয়ে বিয়ে দিতে দেখে সায়েম কেয়ার আম্মু কে বলেছিলো সায়েমের কাছে কেয়া কে বিয়ে দিলেই যৌতুক ছাড়াই বিয়ে করবে। বাচ্চা বয়সে সায়েমের কথাটা শুনে সেদিন হেসেছিলো সবাই। বাড়ির পাশের নদীটাতে শাপলা তুলতে আর ভেলা চালিয়ে বেড়াতো দুজন মিলে। কেয়া সাঁতার জানতোনা, তবুও ভয় ছিলোনা বিন্দুমাত্রও। কেনোনা সায়েমের উপর যথেষ্ট ভরসা ছিলো কেয়ার। একদিন ভেলা থেকে পড়ে গিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছিলো কেয়া, তা দেখেই সায়েম নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়লো কেয়াকে বাঁচাতে। কিন্তু কেয়া সায়েমকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরায় দুজনই নদীর পানিতে ডুবেই যাচ্ছিলো প্রায়। পাশেই একটা নৌকা থাকায় সেইবার বেঁচেছিল ঈশ্বরের কৃপায়।
অতঃপর সায়েমের আব্বুর চাকরির ট্রান্সফারের কারণে বগুড়া শহরে চলে যেতে হয় তাদের। সেদিন খুব কেঁদেছিলো দুজনই, তবে সেটা না বুঝেই। হয়তো খেলার সাথী দূরে চলে যাচ্ছে বলে।
.
এরপর দুজনের দেখা হয়নি প্রায় সাত বছর। সায়েম এসএসসি শেষ করে বেড়াতে এসেছিলো কেয়াদের বাড়িতে। তখন কেয়া পড়তো ক্লাস নাইনে। ছোটবেলার খেলার সাথীর সাথেও কথা বলতে লজ্জা পেতো কেয়া। কারণ টা ছিলো তখন দুজনই যুবক-যুবতী। এক কথা দুই কথা আবারো ফিরিয়ে নিলো পুরনো সম্পর্কে। দুজন এখনো খেলার সাথী হয়েই দুষ্টামি করে। তবে যৌবনের শুরুটা যে আবেগপ্রবণতার, সেটারই পুনরাবৃত্তি করলো দুজনে। খেলার সাথীর সাথে দুষ্টামি ছেড়ে জড়িয়ে গেলো প্রেমের জগতে। প্রেম প্রেম খেলার রেসে এগিয়ে গেলো দুজনেই। তবে পুরোটাই ছিলো আবেগভর্তি ভালোবাসা। যেখানে চাহিদা থাকবে অনেক কিছু, কিন্তু পাওয়ার আশাটা করা বোকামি। সায়েম মাঝে মাঝেই চাইতো কেয়ার সাথে শারীরিক সম্পর্ক কিংবা শারীরবৃত্তীয় কিছু করতে, কিন্তু রাজি হচ্ছিলো না কেয়া। ভয় টা ছিলো কেউ দেখে ফেলার। তবুও সায়েম প্রেসার দিতেই থাকতো এইসবের জন্যে। কেয়া অনেক কষ্টে কন্ট্রোল করেছে নিজেকে। তবে বয়সের তাড়নায় নয়, ভালোবাসার রক্ষার্থে চুম্বনের স্বাদ দিয়েছিলো সায়েমকে, কিন্তু সায়েম তাতেও অপূর্ণ। দোষ টা সায়েমের নয়, দোষ টা বয়সের, দোষ টা অল্প বয়সে প্রেমে পড়ার, দোষ টা সায়েম কেয়া এত্তো কাছাকাছি থাকার। হয়তো সায়েমের জায়গায় ১৬ বছরের অন্য কেউ থাকলেও এমনটাই হতো। তবুও সায়েম কেয়ার সম্পর্ক ভালোই চলছিলো।
হঠাত একদিন সায়েমের সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে ফোনে কথা বলা আর দেখা করার কথা জেনে গেলো দু পরিবার। জেনে গেছিলো অল্প বয়সে প্রেমের নেশায় মত্ততার কথা। কেয়া কে ওর মা এবং সায়েমকে তার বাবা খুব পিটিয়ে ছিলো সেদিন। এরপরেও সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার দরূন কেয়া অসংখ্যবার মার খেয়েছে তার মায়ের হাতে, সায়েমের বাবাও সায়েমকে ছেড়ে কথা বলেনি। তবে সম্পর্ক টিকে থাকলেও ছিলো পুরোটাই আবেগের। যার প্রমাণ স্বরূপ সায়েম বরাবরই চাইতো শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করার। অনেক চেষ্টা করেছিলো সায়েম, কিন্তু কেয়া কিছুতেই রাজি না হওয়ার দরূন ফাটল ধরে সম্পর্কে। শেষমেষ সায়েম কেয়ার একটা বান্ধবীকে প্রোপোজ করে বসে। কেয়ার ঐ বান্ধবী কেয়াকে ডেকে সব বলে দেয়।
অতঃপর অল্প বয়সে প্রেমের নেশায় আক্রান্ত হওয়া সায়েম কে সবার সামনেই কলার চেপে ধরেছিলো কেয়া, চোখে অঝোরে ঝরছিলো জল। কেয়া বলেছিলো সেদিন.......
--আমি অন্য কোন মেয়ের মতো দেহ দিয়ে ভালোবাসতে পারবোনা তোকে, আমি তোকে এমনিতেই অনেক ভালবাসি। পারলে ভালোবাসা দিয়েই এই ভালোবাসার মূল্য দিস। তবে আমার চোখের সামনে কিংবা আমার কাছের কাউকে এভাবে আপন করতে গেলে খুন করবো আমি তোকে।
.
কথা গুলো বলতে বলতেই চোখের জলেরবন্যায় ভেসেই যাচ্ছিলো কেয়া। কেয়ার হাতে থাকা ব্যাগ টা দিয়ে বেশ কয়েকবার মেরেও ছিলো সায়েমকে, কিন্তু সায়েম কিছুই বলেনি। সায়েম হয়তো উপলব্ধি করতে পেরেছিলো কেয়ার ভালোবাসা। কেয়া ব্যাগ দিয়ে আঘাত করার পরও কিছু বলেনি, বরং হা করেই তাকিয়ে থেকেছে কেয়ার পানে। কেয়ার শেষ নজর টা পড়েছিলো সায়েমের চোখ বেয়েও জল পড়ার দৃশ্যটায়। নির্বাক সায়েম অশ্রু ফলাচ্ছে চোখে, কিন্তু কিছু বলছেনা। কিছুটা অবাক হয়েই প্রস্থান করলো কেয়া। সায়েম দাঁড়িয়েই রইলো কেয়ার পানে চেয়ে।
.
অতঃপর সায়েম আর কখনো কেয়ার সামনে আসেনি, সেদিনই চলে গিয়েছিলো বাসায়। কেয়ার বান্ধবীর সাথেও কন্টিনিউ করার চেষ্টা করেনি। মাঝে মাঝে সায়েমের কথা গুলো মনে করে খুব কান্না করতো কেয়া। বয়স টা অল্প হলেও অনেক বেশি ভালবেসেছিলো সায়েমকে। যদিও কেয়ার আবেগের এই ভালোবাসা যেকোনো সময়ই মোড় নিতে পারতো। আবেগের ভালোবাসা টা জীবনে চিরস্থায়ী হয়না, হয়তো প্রথম প্রেমের স্মৃতি হয়েই থেকে যায় মনে। যেমন টা সায়েমের স্মৃতিগুলো এখনো রয়েই গেছে কেয়ার মনে, হয়তো থাকবে যুগ যুগ ধরে।
.
প্রায় পাঁচ বছর পর সায়েম আর কেয়ার দেখা হলো আজ। ফুচকার দোকানে এভাবে দেখা হবে ভাবতেই পারেনি কেয়া। সায়েমের চোখ দুটো ছলছল দেখে মনেই হচ্ছিলো কেয়ার মতই এখনো সায়েমও তাকে মনে রেখেছে, মনে রেখেছে কেয়ার স্মৃতি গুলোকে।
ফুচকা না খেয়েই বাসায় ফিরে জানতে পারলো সায়েম আর তার পরিবার কিছুদিনের জন্য বেড়াতে এসেছে। কেয়া ভাবতেই পারছিলোনা কি করবে, সায়েম কে দেখলেই যে মাথাটা কেমন যেনো ঘুরপাক খায় কেয়ার।
রাতে সবাই একসাথে খাওয়া-দাওয়া করার সময়ও নিশ্চুপ ছিলো দুজনই। তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে শুয়ে পড়েছিলো কেয়া। ভয় টা ছিলো সায়েমের সাথে দেখা হয়ে যাওয়া। কিছুক্ষণ পর হঠাত করেই দরজায় নক করার শব্দে উঠে আসে কেয়া। দরজা খুলতেই দেখলো সায়েম দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই সায়েম বলে উঠলো......
--কিরে, আমার সাথে আর কথা বলবিনা? পাঁচবছরেও রাগ কমেনি?
--কি বলবো? যে মানুষ কারো মন নিয়ে খেলতে পারে, তার সাথে আমার কিছুই বলার নেই।
--মন নিয়ে খেলিনি, তখন বয়স টা ছিলো আবেগের। আমি যে কাজটা করেছি, সেটা আবেগ আর মোহ ছিলো। কিন্তু আমি কাজ টা না করলে তুই আমাকে এখনো মনে রাখতিনা, বরং এর চেয়েও ভয়ঙ্কর কিছু একটা করতি।
--হ, আমি তো তোর মতো ফালতু?
--আমি তো আবেগ আর মোহে পড়ে এইসব করেছি, কিন্তু তোরা মেয়েরা মোহ ছাড়াই অকারণে পরিবর্তন হয়ে যাস। আমি তোকে ছেড়ে গেছি বলে ভাবছিস তোর শরীর পাইনি বলে হারিয়ে গেছি, কিন্তু তোরা ছেড়ে গেলে এইরকম কোন কারণও রেখে যাসনা অকারণেই হারিয়ে যাস।
--হয়তোবা, কিন্তু আমি কি হারিয়ে যেতাম?
--হয়তোবা যেতি, কিন্তু তোর বান্ধবীকে প্রোপোজ করা টা আমার একটা দুষ্টামি বুদ্ধি ছিলো যেনো তুই রেগেমেগে হলেও আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করস। তখন এটা ছাড়া আর কিছুই মাথায় ঢুকেনি। আসলে পরিশ্রম ছাড়াই তোর ভালোবাসা পেয়ে গেছিলাম তো, তাই ধরে রাখতে পারিনি।
--হুম, এখন আর বলে কি লাভ? আমি এখন অন্য একজনকে ভালবাসি।
--জানি থাকবে, আমারও একটা গার্লফ্রেন্ড আছে। তবে ওর কাছে কখনো দেহ চাইনি, ভালোবাসা চেয়েছি। কারণ আমি এখন ম্যাচিউরড।
--তাহলে তো ভালোই।
--হুম, চল আবার নতুন করে বন্ধু হই।
--ওক্কে, তবে জাস্ট বন্ধু।
--হুম, একটা সত্যি কথা কি জানিস?
--কি?
--আমরা যদি তখন প্রেম না করে এখন করতাম, তাহলে অনেক বেশি হ্যাপি হতে পারতাম।
--হুম, সেটা অবশ্য ঠিক।
--হুম, এই জন্যই সবার প্রতি একটাই রিকুয়েস্ট, আবেগের বয়সে প্রেম করে মন নষ্ট করে লাভ নেই। আবেগের বয়সের শ্রেষ্ঠ প্রেমটাও বিবেকের বয়সের স্মৃতি মাত্র...........
হঠাত করেই চোখ পড়লো পাশেই ফুচকার প্লেট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার দিকে। চোখ পড়তেই কেমন থমকে গেলো কেয়া, নিশ্চুপ হয়ে গেলো তার পৃথিবী। কিছুক্ষণ থ হয়েই দাঁড়িয়ে ছিলো কেয়া। ছেলেটাও কিছু বলছেনা, দাঁড়িয়ে আছে অবাক হয়েই। দুজনের চোখই ছলছল করছিলো জলের হাওয়ায়। অতঃপর ফুচকা না খেয়েই বাসায় ফিরে যায় কেয়া।
ছেলেটার নাম সায়েম, কেয়ার চাচাতো ভাই। কেয়ার থেকে দুবছরের বড় হলেও কেয়ার ছোট বেলার খেলার সাথী ছিলো সায়েম। সায়েমের পুতুল খেলা, বউ জামাই খেলা কিংবা হাড়িপাতিল খেলার সঙ্গী ছিলো কেয়াই।
একবার পাশের বাড়িতে যৌতুক দিয়ে বিয়ে দিতে দেখে সায়েম কেয়ার আম্মু কে বলেছিলো সায়েমের কাছে কেয়া কে বিয়ে দিলেই যৌতুক ছাড়াই বিয়ে করবে। বাচ্চা বয়সে সায়েমের কথাটা শুনে সেদিন হেসেছিলো সবাই। বাড়ির পাশের নদীটাতে শাপলা তুলতে আর ভেলা চালিয়ে বেড়াতো দুজন মিলে। কেয়া সাঁতার জানতোনা, তবুও ভয় ছিলোনা বিন্দুমাত্রও। কেনোনা সায়েমের উপর যথেষ্ট ভরসা ছিলো কেয়ার। একদিন ভেলা থেকে পড়ে গিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছিলো কেয়া, তা দেখেই সায়েম নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়লো কেয়াকে বাঁচাতে। কিন্তু কেয়া সায়েমকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরায় দুজনই নদীর পানিতে ডুবেই যাচ্ছিলো প্রায়। পাশেই একটা নৌকা থাকায় সেইবার বেঁচেছিল ঈশ্বরের কৃপায়।
অতঃপর সায়েমের আব্বুর চাকরির ট্রান্সফারের কারণে বগুড়া শহরে চলে যেতে হয় তাদের। সেদিন খুব কেঁদেছিলো দুজনই, তবে সেটা না বুঝেই। হয়তো খেলার সাথী দূরে চলে যাচ্ছে বলে।
.
এরপর দুজনের দেখা হয়নি প্রায় সাত বছর। সায়েম এসএসসি শেষ করে বেড়াতে এসেছিলো কেয়াদের বাড়িতে। তখন কেয়া পড়তো ক্লাস নাইনে। ছোটবেলার খেলার সাথীর সাথেও কথা বলতে লজ্জা পেতো কেয়া। কারণ টা ছিলো তখন দুজনই যুবক-যুবতী। এক কথা দুই কথা আবারো ফিরিয়ে নিলো পুরনো সম্পর্কে। দুজন এখনো খেলার সাথী হয়েই দুষ্টামি করে। তবে যৌবনের শুরুটা যে আবেগপ্রবণতার, সেটারই পুনরাবৃত্তি করলো দুজনে। খেলার সাথীর সাথে দুষ্টামি ছেড়ে জড়িয়ে গেলো প্রেমের জগতে। প্রেম প্রেম খেলার রেসে এগিয়ে গেলো দুজনেই। তবে পুরোটাই ছিলো আবেগভর্তি ভালোবাসা। যেখানে চাহিদা থাকবে অনেক কিছু, কিন্তু পাওয়ার আশাটা করা বোকামি। সায়েম মাঝে মাঝেই চাইতো কেয়ার সাথে শারীরিক সম্পর্ক কিংবা শারীরবৃত্তীয় কিছু করতে, কিন্তু রাজি হচ্ছিলো না কেয়া। ভয় টা ছিলো কেউ দেখে ফেলার। তবুও সায়েম প্রেসার দিতেই থাকতো এইসবের জন্যে। কেয়া অনেক কষ্টে কন্ট্রোল করেছে নিজেকে। তবে বয়সের তাড়নায় নয়, ভালোবাসার রক্ষার্থে চুম্বনের স্বাদ দিয়েছিলো সায়েমকে, কিন্তু সায়েম তাতেও অপূর্ণ। দোষ টা সায়েমের নয়, দোষ টা বয়সের, দোষ টা অল্প বয়সে প্রেমে পড়ার, দোষ টা সায়েম কেয়া এত্তো কাছাকাছি থাকার। হয়তো সায়েমের জায়গায় ১৬ বছরের অন্য কেউ থাকলেও এমনটাই হতো। তবুও সায়েম কেয়ার সম্পর্ক ভালোই চলছিলো।
হঠাত একদিন সায়েমের সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে ফোনে কথা বলা আর দেখা করার কথা জেনে গেলো দু পরিবার। জেনে গেছিলো অল্প বয়সে প্রেমের নেশায় মত্ততার কথা। কেয়া কে ওর মা এবং সায়েমকে তার বাবা খুব পিটিয়ে ছিলো সেদিন। এরপরেও সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার দরূন কেয়া অসংখ্যবার মার খেয়েছে তার মায়ের হাতে, সায়েমের বাবাও সায়েমকে ছেড়ে কথা বলেনি। তবে সম্পর্ক টিকে থাকলেও ছিলো পুরোটাই আবেগের। যার প্রমাণ স্বরূপ সায়েম বরাবরই চাইতো শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করার। অনেক চেষ্টা করেছিলো সায়েম, কিন্তু কেয়া কিছুতেই রাজি না হওয়ার দরূন ফাটল ধরে সম্পর্কে। শেষমেষ সায়েম কেয়ার একটা বান্ধবীকে প্রোপোজ করে বসে। কেয়ার ঐ বান্ধবী কেয়াকে ডেকে সব বলে দেয়।
অতঃপর অল্প বয়সে প্রেমের নেশায় আক্রান্ত হওয়া সায়েম কে সবার সামনেই কলার চেপে ধরেছিলো কেয়া, চোখে অঝোরে ঝরছিলো জল। কেয়া বলেছিলো সেদিন.......
--আমি অন্য কোন মেয়ের মতো দেহ দিয়ে ভালোবাসতে পারবোনা তোকে, আমি তোকে এমনিতেই অনেক ভালবাসি। পারলে ভালোবাসা দিয়েই এই ভালোবাসার মূল্য দিস। তবে আমার চোখের সামনে কিংবা আমার কাছের কাউকে এভাবে আপন করতে গেলে খুন করবো আমি তোকে।
.
কথা গুলো বলতে বলতেই চোখের জলেরবন্যায় ভেসেই যাচ্ছিলো কেয়া। কেয়ার হাতে থাকা ব্যাগ টা দিয়ে বেশ কয়েকবার মেরেও ছিলো সায়েমকে, কিন্তু সায়েম কিছুই বলেনি। সায়েম হয়তো উপলব্ধি করতে পেরেছিলো কেয়ার ভালোবাসা। কেয়া ব্যাগ দিয়ে আঘাত করার পরও কিছু বলেনি, বরং হা করেই তাকিয়ে থেকেছে কেয়ার পানে। কেয়ার শেষ নজর টা পড়েছিলো সায়েমের চোখ বেয়েও জল পড়ার দৃশ্যটায়। নির্বাক সায়েম অশ্রু ফলাচ্ছে চোখে, কিন্তু কিছু বলছেনা। কিছুটা অবাক হয়েই প্রস্থান করলো কেয়া। সায়েম দাঁড়িয়েই রইলো কেয়ার পানে চেয়ে।
.
অতঃপর সায়েম আর কখনো কেয়ার সামনে আসেনি, সেদিনই চলে গিয়েছিলো বাসায়। কেয়ার বান্ধবীর সাথেও কন্টিনিউ করার চেষ্টা করেনি। মাঝে মাঝে সায়েমের কথা গুলো মনে করে খুব কান্না করতো কেয়া। বয়স টা অল্প হলেও অনেক বেশি ভালবেসেছিলো সায়েমকে। যদিও কেয়ার আবেগের এই ভালোবাসা যেকোনো সময়ই মোড় নিতে পারতো। আবেগের ভালোবাসা টা জীবনে চিরস্থায়ী হয়না, হয়তো প্রথম প্রেমের স্মৃতি হয়েই থেকে যায় মনে। যেমন টা সায়েমের স্মৃতিগুলো এখনো রয়েই গেছে কেয়ার মনে, হয়তো থাকবে যুগ যুগ ধরে।
.
প্রায় পাঁচ বছর পর সায়েম আর কেয়ার দেখা হলো আজ। ফুচকার দোকানে এভাবে দেখা হবে ভাবতেই পারেনি কেয়া। সায়েমের চোখ দুটো ছলছল দেখে মনেই হচ্ছিলো কেয়ার মতই এখনো সায়েমও তাকে মনে রেখেছে, মনে রেখেছে কেয়ার স্মৃতি গুলোকে।
ফুচকা না খেয়েই বাসায় ফিরে জানতে পারলো সায়েম আর তার পরিবার কিছুদিনের জন্য বেড়াতে এসেছে। কেয়া ভাবতেই পারছিলোনা কি করবে, সায়েম কে দেখলেই যে মাথাটা কেমন যেনো ঘুরপাক খায় কেয়ার।
রাতে সবাই একসাথে খাওয়া-দাওয়া করার সময়ও নিশ্চুপ ছিলো দুজনই। তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে শুয়ে পড়েছিলো কেয়া। ভয় টা ছিলো সায়েমের সাথে দেখা হয়ে যাওয়া। কিছুক্ষণ পর হঠাত করেই দরজায় নক করার শব্দে উঠে আসে কেয়া। দরজা খুলতেই দেখলো সায়েম দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই সায়েম বলে উঠলো......
--কিরে, আমার সাথে আর কথা বলবিনা? পাঁচবছরেও রাগ কমেনি?
--কি বলবো? যে মানুষ কারো মন নিয়ে খেলতে পারে, তার সাথে আমার কিছুই বলার নেই।
--মন নিয়ে খেলিনি, তখন বয়স টা ছিলো আবেগের। আমি যে কাজটা করেছি, সেটা আবেগ আর মোহ ছিলো। কিন্তু আমি কাজ টা না করলে তুই আমাকে এখনো মনে রাখতিনা, বরং এর চেয়েও ভয়ঙ্কর কিছু একটা করতি।
--হ, আমি তো তোর মতো ফালতু?
--আমি তো আবেগ আর মোহে পড়ে এইসব করেছি, কিন্তু তোরা মেয়েরা মোহ ছাড়াই অকারণে পরিবর্তন হয়ে যাস। আমি তোকে ছেড়ে গেছি বলে ভাবছিস তোর শরীর পাইনি বলে হারিয়ে গেছি, কিন্তু তোরা ছেড়ে গেলে এইরকম কোন কারণও রেখে যাসনা অকারণেই হারিয়ে যাস।
--হয়তোবা, কিন্তু আমি কি হারিয়ে যেতাম?
--হয়তোবা যেতি, কিন্তু তোর বান্ধবীকে প্রোপোজ করা টা আমার একটা দুষ্টামি বুদ্ধি ছিলো যেনো তুই রেগেমেগে হলেও আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করস। তখন এটা ছাড়া আর কিছুই মাথায় ঢুকেনি। আসলে পরিশ্রম ছাড়াই তোর ভালোবাসা পেয়ে গেছিলাম তো, তাই ধরে রাখতে পারিনি।
--হুম, এখন আর বলে কি লাভ? আমি এখন অন্য একজনকে ভালবাসি।
--জানি থাকবে, আমারও একটা গার্লফ্রেন্ড আছে। তবে ওর কাছে কখনো দেহ চাইনি, ভালোবাসা চেয়েছি। কারণ আমি এখন ম্যাচিউরড।
--তাহলে তো ভালোই।
--হুম, চল আবার নতুন করে বন্ধু হই।
--ওক্কে, তবে জাস্ট বন্ধু।
--হুম, একটা সত্যি কথা কি জানিস?
--কি?
--আমরা যদি তখন প্রেম না করে এখন করতাম, তাহলে অনেক বেশি হ্যাপি হতে পারতাম।
--হুম, সেটা অবশ্য ঠিক।
--হুম, এই জন্যই সবার প্রতি একটাই রিকুয়েস্ট, আবেগের বয়সে প্রেম করে মন নষ্ট করে লাভ নেই। আবেগের বয়সের শ্রেষ্ঠ প্রেমটাও বিবেকের বয়সের স্মৃতি মাত্র...........
0 comments:
Post a Comment